নিউজ ডেস্ক :: শুক্রবার দুপুর ১টা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক ভদ্রবেশি যুবক। রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎ এক মহিলার গায়ের সাথে হাল্কা ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লেগেছেও বলা যাবেনা, অনেকটা কৌশলে মহিলাটি ওই ভদ্র যুবকটিকে ধাক্কা দিয়েছে। পরক্ষণেই মহিলাটির পিছন থেকে এক যুবক মহিলাকে ধাক্কা দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতে লাগলো। সেকেন্ডের মধ্যে আরো চার-পাঁচজন যুবক এসে ওই ভদ্র লোকটিকে ঘিরে ধরলো। সে বুঝতে পারছেনা আসলে ঘটনাটা কি?। তবে এর মধ্যে মহিলাটি কোথাও উদাও হয়ে গেছে।
এক পর্যায়ে ওই ভদ্র লোকটিকে বখাটেরা টেনে রাস্তার এক পাশে নিয়ে তার পকেটে থাকা টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। বখাটের দল আর এই পথ দিয়ে না হাঁটার জন্য ধমক দেয়। উপরের লেখাগুলো কোন গল্প বা কল্পনা না। চকরিয়া পৌরশহরের বাস্তব ঘটনা। এরকম প্রতিদিন হরহামেশাই চকরিয়া পৌরশহরে অভিনব এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যা মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে পৌরশহরে আসা নানা শ্রেণীর-পেশার মানুষকে।
চকরিয়া পৌরসদরের ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধী ধরার জন্য লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামরা স্থাপন করা হলেও তার কোন সুফল পাচ্ছেনা চকরিয়াবাসী। সদরের বিভিন্ন বিদ্যুৎ খুটিতে স্থাপিত সিসি ক্যামরা গুলো দেখলে মনে হয় যেন আকাশের তারা গুনছে।
আর এতে অসহায় আত্মসমর্পন করছে সাধারণ মানুষ। হারাচ্ছে টাকা ও মোবাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। বিশেষ করে চকরিয়া পৌরশহরের অভ্যন্তরীন সড়কগুলোতে এই অভিনব প্রতারণার ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে সাধারণ মানুষ অহরহ প্রতারণার শিকার হলেও প্রতারক চক্র থাকছে ধরা-ছোয়ার বাইরে।
প্রতারণার শিকার আবুল কাশেম (ছদ্মনাম) নামের ৩৫ বয়সি এক যুবক বলেন, কয়েকদিন আগে চকরিয়া পৌরশহরের ওয়াপদা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এসময় এক মহিলা আমার গায়ের সাথে জোর করে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে মহিলাটি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। পরে দেখি আরো চার-পাঁচজন যুবক এসে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এই দৃশ্য দেখে আমি অনেকটা হতবাক হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম না আসলে কি হয়েছে। পরে বখাটে যুবকদের হাত থেকে বাঁচতে নিভৃতে পকেটে যা টাকা ছিলো সব দিয়ে দিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরে মহিলা ও পুরুষ সদস্যদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় অভিনব কায়দায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা-মোবাইলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হাতিয়ে নিচ্ছে। পৌরশহরের অভ্যন্তরীন সড়ক ওয়াপদা সড়ক, বালিকা বিদ্যালয় সড়ক, বালক উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, বাঁশঘাটা সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে নিত্যদিন এমন সব প্রতারণার ফাঁদ তৈরী প্রতারক দল। প্রতারখ দলের সদস্যরা এসব সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকে। এলাকায় নতুন কোন লোকজন দেখলেই তাদেও টার্গেটে পরিণত করে প্রতারক দলের সদস্যরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, পৌরশহরের এই রকম বহু প্রতারক চক্র রয়েছে। তারা যে শুধু মহিলাদের দিয়ে প্রতারণা করে তা না। সুযোগ বুঝে তারা চুরি-ছিনতাইও করে। প্রতারণার কাজে মহিলা ব্যবহার করায় অনেকে তা মুখ বুঝে সহ্য কে থাকে। যারা ভুক্তভোগী তারা থানা পর্যন্ত যায়না। যার কারণে ওইসব প্রতারক চক্র ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সাদা পোষাকের পুলিশ বাহিনী দিয়ে যদি এসব সড়কগুলোতে নজনদারি বাড়ানো যায়, তাহলে এসব ঘটনা ঘটবেনা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার এক কর্মকর্তা জানান, এধরনের কিছু বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা আমরা জেনেছি। অচিরেই পৌরশহরের এসব সড়কগুলো পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হবে।
পাঠকের মতামত: